বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী যৌতুক দেয়া এবং যৌতুক নেয়া দু'টোই অপরাধ৷ এছাড়া যৌতুকের কারণে কেউ আত্মহত্যা করলে প্ররোচনাকারীর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ কিন্তু বাস্তব অবস্থা কী? যৌতুক কি বিদায় নিয়েছে আমাদের সমাজ থেকে?
যৌতুকের কারণে নির্যাতন, হত্যা, আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছেই। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ ধরনের ঘটনায় মামলা কম হয়। মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, পারিবারিক সহিংসতার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার যৌতুক। প্রতিরোধে দরকার আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ও সামাজিক আন্দোলন।
যৌতুক একটি সামাজিক অভিশাপ। যৌতুককে নারী-নির্যাতনের মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমরা নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলছি, কিন্তু যৌতুকের করালগ্রাস থেকে মুক্তি মেলেনি এদেশের নারী সমাজের। যৌতুকের অভিশাপ থেকে নারী সমাজ তথা রাষ্ট্রকে বাঁচাতে রয়েছে আইন। কিন্তু একের পর এক আইন করেও যৌতুক তথা নারী নির্যাতন বন্ধ করা যাচ্ছেনা। যৌতুকের কারনে নারী নির্যাতনের কোনো সঠিক হিসাব আমাদের নাই। সব নির্যাতনের কথা গণমাধ্যমে আসেনা। দৃষ্টির অগোচরে থেকে যায় নারী নির্যাতনের অনেক করুণ কাহিনী।
ইউএনডিপি’র এক গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, বাংলাদেশে শতকরা ৫০ শতাংশ বিবাহিত নারী যৌতুকের কারণে শারীরিক অথবা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। আমরা নারীর ক্ষমতায়ন বা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার যে দাবী করি, ওপরের তথ্যটি যদি সঠিক হয়, তবে তা এক ভিন্ন বাস্তবতার সাক্ষ্য দেয়।
নারী নির্যাতনের ভয়াবহতা বা চরিত্রের রকম ফের হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু নির্যাতনের হার কমেনি। এক সময় এসিড নিক্ষেপ সমাজে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যেতো দেশের কোনো না কোনো প্রান্তে এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এখন যদিও তার ভয়াবহতা কিছুটা কমেছে। তবে নতুন রূপে দেখা দিয়েছে অভিনব নির্যাতনের কৌশল। নারী নির্যাতন বলতে আমরা কেবল নারীর প্রতি শারীরিক নির্যাতনের কথাই বুঝি। কিন্তু এ ধারণাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। প্রচলিত এ ধারণার ফলে নারী নির্যাতনের প্রায় অর্ধেক চিত্রই থেকে যায় দৃষ্টির আড়ালে। যেকোনো ধরণের মানসিক নির্যাতনও নারী নির্যাতনের অন্তর্ভূক্ত। কাউকে পদে পদে খোঁটা দেওয়াও যে নারী নির্যাতন হতে পারে সে ধারণা আমাদের নেই।
ফলে নারী নির্যাতনের সঙ্গা নির্ধারণ প্রথমে জরুরি। নারী নির্যাতনের প্রকৃত ধারণা না থাকলে এর আকার, প্রকার ও ব্যাপতার প্রকৃত চিত্র আমরা পাবোনা। আইনে নারীর প্রতি সব ধরনের নির্যাতন ও নিষ্পেণই নারী নির্যাতনের অন্তর্ভূক্ত। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, ধর্মীয়, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় ও এমনটি কর্মক্ষেত্রেও নারীর প্রতি যেকোনো ধরনের নির্যাতন বা বৈষম্য আরোপ করা দন্ডনীয় অপরাধ।
অর্থাৎ যেকোনো রকমের নির্যাতন, যৌন হয়রানী, এসিড নিক্ষেপ, তালাক, যৌতুক, নারী পাচার, গণিকা বৃত্তি, পরিবারে নারী নিগ্রহ, অপহরণ, উত্যক্ত করা সবই এখন নারী নির্যাতন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সব অপরাধেরই শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। আবার নারী পাচার, অপহরণ, এসিড অপরাধ দমন, তালাক ও পারিবারিক আইনের সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য সুনির্দিষ্ট আইনও আছে। কিন্তু আইন থাকাই শেষ কথা নয়। আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতা ছাড়া কোনো আইনই কার্যকর হতে পারেনা। মানুষের সচেতনা ও সম্পৃক্ততা ছাড়া আইনের সুফল পাওয়া সম্ভব না।
সেকারণেই দেশে যৌতুক বিরোধী আইন থাকার পরও যৌতুকের ঘটনা কমছেনা। কমছেনা যৌতুকের কারণে নারী নির্যাতন। যৌতুক ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে প্রচুর মামলাও হচ্ছে। কিন্তু সে মামলার নিষ্পত্তির হার ও নতুন মামলা রুজু হওয়ার মধ্যে ব্যাপক ঘাটতি বিদ্যমান। ফলে, প্রতি বছরই অনিষ্পণ্ন মামলার সাথে যোগ হচ্ছে আরো নতুন মামলা। সৃষ্টি হচ্ছে মামলা জট। মামলা জটের আরো কারণের মধ্যে আছে, বিচারকের অভাব, সাক্ষীর অভাব, আসামীর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব, আইনজীবীদের যথাযথ পদক্ষেপের অভাব ইত্যাদি।
যৌতুক দেয়া-নেয়া দুটোই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ১৯৮০ সালে পর ২০০০ সালে আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০০৩ সালে তা আবার সংশোধনও করা হয়। এ আইনে বলা হয়, যদি কোনো নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি যৌতুকের জন্য কোনো নারীর মৃত্যু ঘটান বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করেন, অথবা কোনো নারীকে কোনো রকমের জখম করেন, তবে ঐ স্বামী, স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা ব্যক্তি- মৃত্যু ঘটানোর জন্য মৃত্যুদন্ডে বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টার জন্য যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং উভয় ক্ষেত্রে ওই দন্ডের অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবেন। কাজেই, যৌতুকের কারণে কোনো নারীকে শারীরিক নির্যাতন, জখম বা মৃত্যু ঘটানো হলে সেক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া জখম বা শারীরিক অন্যান্য নির্যাতনের জন্য যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ নানা ধরনের শাস্তির বিধানতো আছেই। এ শাস্তি কেবল প্রত্যক্ষ নির্যাতনকারীরই নয়, পরোক্ষভাবে যারা এতে সহায়তা করেন বা মদদ দেন তারাও শাস্তির আওতায়। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে যে উদ্বিগ্নতা তা এখন আর কোনো নির্দিষ্ট রাষ্ট্রীয় সীমার মধ্যে আবদ্ধ নেই। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। পৃথিবীর সব রাষ্ট্রেই নারী নির্যাতনের শিকার হয়। সব ধরণের মানবাধিকার লংঘনেরই প্রাথমিক শিকার হয় নারী ও শিশুরা। হোক তা শাস্তি বা যুদ্ধাবস্থা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, যৌতুককে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালে ১৭৩ জন নারী খুন হয়েছেন। নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৬২টি। আর গত ৫ বছরে এ সংখ্যা ২ হাজারের বেশি। হত্যার শিকার হয়েছেন ১ হাজার ১৫১ জন নারী। ১৪টি দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে এ হিসাব এটি।
→পরি,শেষে আমি এটাই বলতে পারি, যতদিন না আমরা আমাদের দৃষ্টি পরিবর্তন না করি ততদিন পর্যন্ত এই যৌতুক নামক অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারবো না। প্রতিবাদী হয়ে উঠে সময় এসেছে এই সব সমস্যার মোকাবিলা করার। বাল্যবিবাহ রুখতে হবে। এই সব আমাদেরি করতে হবে। দিরে দিরে ফুটে উঠবে এই বাংলার প্রতিটি বনের মুখের হাসি তবেই হবে সোনার বাংলা।
![]() |
Add caption |
আমি সাজ্জাদ বলছি...
প্রতিবাদ করতে শিখুন...
#আমি_একজন_সচেতন_নাগরিক
#আপনি_সচেতন_আছেন_তো...
0 মন্তব্যসমূহ