ফেনীর বেশির ভাগ এলাকাই পানির নিচে। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছে মানুষ। চট্টগ্রামে উদ্ধার তৎপরতায় কর্মীরা। কুমিল্লায় পানিতে ছাদ ছুঁইছুঁই দ্বিতল বাড়িও ছবি : |
ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে ভূমিধসের কারণে বিভিন্ন জেলায় এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ, দুজন নারী। কুমিল্লায় চারটি…
ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে ভূমিধসের কারণে বিভিন্ন জেলায় এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৩ জন পুরুষ, দুই নারী। কুমিল্লায় চারজন, চট্টগ্রামে চারজন, কক্সবাজারে তিনজন, ফেনীতে একজন, নোয়াখালীতে একজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন ও লক্ষ্মীপুরে একজন।
দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার- এ ১১টি জেলায় ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯ জন। ৭৭টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে এবং ৫৮৯টি ইউনিয়ন বা পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় গতকাল সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
আবহাওয়া সংস্থার বরাত দিয়ে এক বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। এ সময় মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মনু, খোয়াই ও ধলাই নদীর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এদিকে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্ব, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উচ্চভূমিতে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা নেই। এ সময় ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। বুলেটিনে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীর পানির স্তর কমছে এবং গঙ্গা ও পদ্মা নদী স্থিতিশীল রয়েছে; যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। বুলেটিনে বলা হয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা নদীর পানির স্তর স্থিতিশীল রয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হ্রাস পেতে পারে।
এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এসব নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
কোন নদী বিপৎসীমার কত ওপরে : পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ৯টায় সিলেটের বাল্লা পয়েন্টে খোয়াই নদীর পানি বিপদসীমার ১৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ পয়েন্টে এ নদীর পানি ১৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছিল।
কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যেখানে দেবিদ্বার পয়েন্টে পানি যাচ্ছিল বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। চট্টগ্রামের রামগড় স্টেশনে ফেনী নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ২১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
চট্টগ্রামে হালদা নদীর পানি নারায়ণহাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে যাচ্ছিল, আর পাঁচপুকুরিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
সকালে মৌলভীবাজার পয়েন্টে মনু নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
আর ফেনীর পরশুরাম স্টেশনের সঙ্গে ‘যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’ হওয়ায় সেখানকার মুহুরী নদীর বিষয়ে তথ্য দিতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
কুমিল্লায় চারজনের মৃত্যু : কুমিল্লায় দুই দিনে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার তিনজন, সোমবার একজন মারা গেছেন। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজন, একজন তার মাথায় পড়ে এবং একজন ডুবে যায়। নাঙ্গলকোটে বন্যার পানিতে ডুবে কেরামত আলী (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে তিনি মারা যান। ওইদিন বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুতের খুঁটি স্পর্শ করে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাফি (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। চৌদ্দগ্রামে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে গাছ পড়ে শাহাদাত হোসেন (৩৪) নামে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে। কুমিল্লা নগরীর সালাউদ্দিন মোড়ে সোহরাব হোসেন সোহাগ নামে এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে। গর্ভবতী স্ত্রীকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেখে আসার পর বৃষ্টির পানিতে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারে আটকা পড়েন তিনি। বুধবার তার স্ত্রী একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়ায় গোমতীর বাঁধ ভেঙে দুই লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙা অংশ দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে লোকালয়ে। বুড়িচং উপজেলার পাশাপাশি আদর্শ সদর উপজেলার একাংশ, ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বুড়িচং উপজেলায় ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
কক্সবাজার: কক্সবাজারে বন্যায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। দুজন নিখোঁজ। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রবল পানিতে ভেসে যাওয়া চারজনের মধ্যে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা হলেন রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের পূর্ব জুমছড়ি এলাকার ছায়েদ হোসেনের ছেলে আমজাদ হোসেন (২২) ও ঈদগড় ইউনিয়নের বৈদ্য পাড়া এলাকার মৃত লাইগ্যা রাখাইনের ছেলে চাচিং রাখাইন (৫৫)।
নিখোঁজরা হলেন গর্জনিয়া ইউনিয়নের সালেহ আহমদের ছেলে রবিউল আলম (৩৫) ও ফতেখানকুল ইউনিয়নের লম্বরীপাড়া এলাকার নুরুল কবির ছেলে। জুনায়েদ (১০)।
চকরিয়া পানির স্রোতে ডুবে গেছে। হাবিব (১৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বড়ইতলী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়চাঁদা বিবিরখিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হাবিব ওই এলাকার মো. জসিম উদ্দিনের ছেলে মো. এদিকে মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদী ও খালে পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রামু, সদর, ঈদগাঁও, চকরিয়া, পেকুয়া ভূমিধসে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে আটকা পড়েছে অন্তত দেড় লাখ মানুষ। রামু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসন থেকে ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চিড়া, গুড়, স্যালাইনসহ শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে।
চট্টগ্রাম : গত দুই দিনের বন্যায় চট্টগ্রামের অন্তত আটটি উপজেলা পানির নিচে তলিয়ে যায়। মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, বাঁশখালী, পটিয়া, বোয়ালখালী, রাউজান, কর্ণফুলী ও হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলার অন্তত ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে মারা গেছেন তিনজন, নিখোঁজ আছেন তিনজন। চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছাইফুল্লাহ মজুমদার বলেন, চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলা কমবেশি পানিতে প্লাবিত হয়। মানুষ উদ্ধারে কাজ চলছে। জেলা প্রশাসন থেকে শুকনা খাবারসহ ত্রাণসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ফটিকছড়ি উপজেলায় পানির স্রোতে নিখোঁজের এক দিন পর সামি (১২) নামে এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সামি নিখোঁজ হয়। সামি দাঁতমারা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড সাদিনগরের ভাড়াটিয়া হামিদের ছেলে।
ফটিকছড়িতে ছেলেকে উদ্ধার করতে গিয়ে নিখোঁজ হন বাবা রজি আহমদ। পরে ছেলেকে পাওয়া গেলেও বাবার খোঁজ মেলেনি। রজি আহমদ ভূজপুরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুলতান আহমদের ছেলে। নারায়ণহাট ইউনিয়নের মির্জারহাটের হালদারকূলে বন্যায় আটকে পড়াদের বাঁচাতে গিয়ে পানিতে ভেসে যাওয়া ইমরানের খোঁজ মেলেনি। ইমরান ইদিলপুর এলাকার তাজুল ইসলামের ছেলে। হাটহাজারী উপজেলায় বন্যার পানি ঢুকে গেলে আইপিএসের সংযোগ খোলার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জিয়াউর রহমান সাকিব (২২) নামের এক যুবক মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ইউসুফ চৌধুরীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। তিনি স্থানীয় মো. জসিম উদ্দিনের ছেলে। রাঙ্গুনিয়ার নিখোঁজ হওয়া রনি (১৭) নামে এক কিশোরের এখনো সন্ধান মেলেনি। বৃহস্পতিবার বিকালে উপজেলা দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড ফুলবাগিচা গাবতল এলাকায় তিনি পানি দেখতে গিয়ে নিখোঁজ হন। রনি স্থানীয় আবু বক্করের ছেলে, পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক।
মিরসরাই : চট্টগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মিরসরাইয়ে ১২টি ইউনিয়নের সবকটি প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহফুজা জেরিন বলেন, মিরসরাইয়ে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। ইতোমধ্যে ১ হাজার ৭০০ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকিদের উদ্ধারে স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ৩০টির অধিক স্পিডবোট আটকে পড়াদের উদ্ধারে কাজ করছে।
ফটিকছড়ি : ফটিকছড়ি উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের সবই প্লাবিত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ১৮টি ইউনিয়নের জন্য ১৮ জন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। ৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সীতাকুণ্ড : সীতাকুণ্ডের ছয় ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৫ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার জন পানিবন্দি।
বাঁশখালী : বাঁশখালী উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন ১ হাজার ৭৫০ পরিবারের ৮ হাজার ৭৫০ জন মানুষ। উপজেলায় গঠন করা হয়েছে ১৫টি মেডিকেল টিম।
রাউজান : উপজেলার ৩২০ পরিবারের ১৬০০ মানুষ পানিবন্দি।
হাটহাজারী : উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম মশিউজ্জামান জানান, উপজেলার প্রায় আটটি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি রয়েছেন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ।
পটিয়া, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী : পটিয়া উপজেলার ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ড মিলিয়ে ১৮ স্থানে ৬ হাজার ৯৪৬ পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বোয়ালখালী উপজেলার ৩ জায়গায় ১০০ পরিবারের প্রায় ৭০০ মানুষ পানিবন্দি আছে। কর্ণফুলী উপজেলায় ১০০ পরিবারের প্রায় ৫০০ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।
নোয়াখালী : নোয়াখালীর ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। তাদের বেশির ভাগই খাবার ও বাসস্থানের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। জেলার ৯ উপজেলার সবকটিতেই বসতঘর, গ্রামীণ সড়ক, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। জানা গেছে, সুবর্ণচর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর ও সদর উপজেলার বেশির ভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক উচ্চতায় জোয়ার হয়েছে। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
লক্ষ্মীপুর : বন্যায় বিপর্যস্ত এখন লক্ষ্মীপুরের মানুষ। প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। এতে জেলার পাঁচটি উপজেলার সাড়ে ৬ লাখেরও বেশি মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মেঘনা, ডাকাতিয়া ও রহমতখালী নদীর পানি এখন বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। গতকাল সকাল থেকে পানি বেড়েছে আরও ২-৩ ফুট। হু হু করে পানি বেড়ে ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চলের মানুষের বসতঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ। ভেসে গেছে পুকুর ও জলাশয়ের মাছ। গ্রাম কিংবা শহর চারদিকে থইথই করছে পানি। প্লাবিত এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে কমলনগর, রামগতি, সদর ও রায়পুরে। এসব এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুছ মিয়া বলেন, ১৮৫টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ৬৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের শুকনো খাবার বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রিত রয়েছে ৮ হাজার ৫০০ জন মানুষ। জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, পানিবন্দি মানুষকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ জেলার বন্যা আক্রান্ত উপজেলাগুলো হলো- চুনারুঘাট, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ সদর, নবীগঞ্জ ও বাহুবল। এসব উপজেলায় মোট ২৬টি ইউনিয়নের ১৪ হাজার ৩৪০টি পরিবার বন্যার পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫৭ হাজার ৫৬০ জন মানুষ। গতকাল দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সুমি রানি বল। তিনি জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য এখন পর্যন্ত মোট ১২৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৩৭৫ জন পুরুষ, ৪৩৮ জন মহিলা, ৮৩ জন শিশু ও ৫ জন প্রতিবন্ধী আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে গবাদিপশুও সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। সুমি রানি বল বলেন, পানিবন্দি মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য ১ হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন চাল, ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ ২৪ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এদিকে জেলায় বৃষ্টিপাত কমায় খোয়াই নদীর পানি কিছুটা কমেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : আখাউড়ায় কমতে শুরু করেছে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের তীব্রতা। ফলে পানি কমতে শুরু করেছে। গতকাল সকাল থেকে আখাউড়ার গাজীবাজার, মোগড়া, মনিয়ন্দসহ বিভিন্ন গ্রামের ডুবে থাকা বাড়িগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুপুরনাগাদ দেড় থেকে ২ ফুট পানি কমে গেছে। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা করা হচ্ছে। এদিকে পানি কমলেও স্রোতের তোড়ে আখাউড়া-কসবা সড়কের দেবগ্রাম ও নয়াদিল এলাকা ভাগ করা একটি ছোট্ট সেতুর একপাশ ধসে যায়।
বাগেরহাট : উজান থেকে আসা বন্যার পানিতে বাগেরহাটে সব নদনদীর পানি বিপৎসীমার ২ থেকে ৪ ফুট ও দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৪ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে সুন্দরবন। বাগেরহাট শহরতলির দড়াটানা, ভৈরব নদীর পানি শুক্রবার সন্ধ্যায় বিপদসীমার ২ ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানগুছি ও বলেশ্বর নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সব থেকে পানি বেড়েছে পশুর ও মোংলা নদীতে। এ দুটি নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ