ব্রয়লার মুরগিতে ভয়াবহ ব্যাকটেরিয়া ‘ই. আলবার্টি’: ছড়াতে পারে মানুষেও, ব্যর্থ করতে পারে অ্যান্টিবায়োটিক!
সম্প্রতি জাপানে মুরগির মাংসে ধরা পড়েছে এক নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়া— ইশেরিশিয়া আলবার্টি (Escherichia albertii), সংক্ষেপে ই. আলবার্টি। এটি মূলত ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়ারই একটি ভ্যারিয়েশন। জাপানের বাজারে এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত মাংস খেয়ে ইতোমধ্যে শতাধিক মানুষ গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়েছেন। তাদের মধ্যে দেখা গেছে ফুড পয়জনিং, ডায়রিয়া, এমনকি কিডনি জটিলতার মতো রোগ।
জাপানে এ ঘটনা সামনে আসার পর বাংলাদেশের বাজারেও একই ধরনের ঝুঁকি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে গবেষণায় নামে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. জায়েদুল হাসান ও তাঁর গবেষক দল। জাপানি গবেষকদের সহায়তায় দেশের চারটি জেলা থেকে ১৭টি ব্রয়লার মুরগির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালানো হয়। বিস্ময়করভাবে দেখা যায়— সবগুলো নমুনাতেই ই. আলবার্টি ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি রয়েছে।
কী এই ই. আলবার্টি?
ই. আলবার্টি একটি 'জুনোটিক' জীবাণু, অর্থাৎ এটি প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে। এটি শরীরে প্রবেশ করলে খাদ্যে বিষক্রিয়া (Food Poisoning), তীব্র ডায়রিয়া ও পাকস্থলীর মারাত্মক সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো, এই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে দেহে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধক্ষমতা সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ—
দেহে ৯৪% সম্ভাবনায় অন্তত একটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কাজ করা বন্ধ করে দেবে।
ভবিষ্যতে সাধারণ সংক্রমণের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক সাড়া দেবে না।
এমনকি অনাগত সন্তানও এই অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী জিন নিয়ে জন্ম নিতে পারে।
শুধু মাংস নয়, সংক্রমণের উৎস আরও বিস্তৃত
গবেষণায় আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে—
শুধু মুরগির মাংস নয়, বরং দোকানের ছুরি, ব্লিডিং কন, এমনকি কর্মীদের হাতেও পাওয়া গেছে এই ভয়ংকর ব্যাকটেরিয়া। যা প্রমাণ করে, পুরো সাপ্লাই চেইন জুড়েই জীবাণুটি ছড়িয়ে পড়েছে।
কেন বাড়ছে এমন ঝুঁকি?
অসচেতন খামারি ও দোকানদারদের অস্বাস্থ্যকর প্রক্রিয়াকরণ।
অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার মুরগির খামারে।
স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে খোলা পরিবেশে মাংস বিক্রি।
সাধারণ মানুষ সচেতন না হওয়া ও রান্নার আগে যথাযথ পরিচ্ছন্নতা না মানা।
করণীয় কী?
বাজার থেকে মুরগি কেনার সময় অবশ্যই পরিষ্কার, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে কাটা হয়েছে কি না লক্ষ্য করতে হবে।
মুরগির মাংস হাত দেওয়ার পর হাত সাবান ও গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুতে হবে।
রান্নার আগে ও পরে রান্নার উপকরণ যেমন ছুরি, কাটিং বোর্ড ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন।
শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিরা এমন মাংস এড়িয়ে চললে ভালো।
সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং জোরদার ও ব্যাকটেরিয়া পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা জারি করা জরুরি।
সূত্র: Dr. Jayedul Hassan, International Journal of Food Microbiology (IJFM),
সংবাদদাতা: সাজ্জাদ হোসেন
0 মন্তব্যসমূহ